রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান হামলায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করছে ইসরায়েল। লেবাননে হামলায়ও তারা সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছে। সাদা ফসফরাসের ব্যবহার বেসামরিক নাগরিকদের গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে ফেলছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি জানায়, সাদা ফসফরাস মানুষকে মারাত্মকভাবে দগ্ধ করতে পারে। ঘরবাড়িতে আগুন ধরে যেতে পারে। জনবহুল এলাকায় সাদা ফসফরাসের ব্যবহার বেআইনি।
শুক্রবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদা ফসফরাস অত্যন্ত দাহ্য রাসায়নিক। অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে তা জ্বলে ওঠে। সাদা ফসফরাস ঘন সাদা ধোঁয়া তৈরি করে। বিশেষ করে জনবহুল এলাকায় এ রাসায়নিক যখন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, তারা ১০ অক্টোবর লেবানন থেকে এবং ১১ অক্টোবর গাজা থেকে ধারণ করা ভিডিও যাচাই করে দেখেছে, সেগুলোতে কামান থেকে ছোড়া গোলায় গাজা শহরের বন্দর এলাকা ও ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের গ্রামীণ এলাকার ওপরে একাধিক সাদা ফসফরাসের বিস্ফোরণ দেখা গেছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীটি দুটি ভিডিওর লিঙ্ক সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছে, ১৫৫ মিলিমিটার সাদা ফসফরাসের কামানের গোলা ব্যবহার করা হচ্ছে। স্পষ্টতই ধুম্রজাল তৈরিতে, চিহ্নিত করতে অথবা সংকেত দিতে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
পোস্ট করা উভয় ভিডিওতেই লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের কাছের দৃশ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। গাজায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করার অভিযোগ করা হয়েছে যে ভিডিওগুলোর ভিত্তিতে সেগুলোর লিঙ্ক পোস্ট করেনি তারা।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচারিত ভিডিওতে গাজার আকাশে পাতলা সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডুলি দেখা গেছে; সাদা ফসফরাসের গোলা ব্যবহারের কারণে এরকম ধোঁয়া তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
রয়টার্স জানিয়েছে, তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভাষ্য স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি।
২০০৮-২০০৯ সালে গাজায় আক্রমণ চালানোর সময় সাদা ফসফরাসের গোলা ব্যবহার করেছিল ইসরায়েল। তখন অনেকগুলো মানবাধিকার গোষ্ঠী দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছিল। ২০১৩ সালে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল, তারা সাদা ফসফরাসের যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, তারা বর্তমানে গাজায় সাদা ফসফরাসযুক্ত অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে অবগত নয়। তবে লেবাননে এই অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের সাদা ফসফরাস ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট। ডেমোক্র্যাট এ আইনপ্রণেতা বলেছেন, আরও নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানিতে তার হৃদয় ভেঙে গেছে। গাজার অধিবাসীরা সেখানকার পরিস্থিতিকে পৃথিবীর নরক বলছেন। গাজায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস করে, যাদের অর্ধেকই শিশু।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনে সাদা ফসফরাসের ব্যবহার, বেসামরিক মানুষের ওপর বোমা হামলা ও যৌথ শাস্তি প্রদান নিষিদ্ধ।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরই মধ্যে ইসরায়েলের বেশ কিছু নাগরিককে বন্দি করেছে তারা। এর জবাবে গাজার শাসক গোষ্ঠীটিকে ‘মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার’ প্রতিজ্ঞা করে পাল্টা অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যে গাজায় এক হাজার ৫৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫০০ শিশু ও ২৭৬ জন নারী রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৬১২ জন। অন্যদিকে ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩০০ জনে।
সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি ও রয়টার্স
ভয়েস/জেইউ।